“আখতারের ফেসবুক পোস্টের পেছনের বার্তা কী?”

“আখতারের ফেসবুক পোস্টের পেছনের বার্তা কী?”

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন (বাঁ থেকে)। ছবি: আখতার হোসেনের ফেসবুক থেকে নেয়া।
ছবির ক্যাপশনে লেখা: ‘দুইজন বন্ধু, একজন ছোটভাই! জাতির প্রত্যাশার ভাষা আমাদের পাথেয় হোক।’ ছবিতে এক ফ্রেমে তিনজন—নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম ও আখতার হোসেন।

গতকাল শুক্রবার রাতে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন দুই উপদেষ্টার সঙ্গে নিজের একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। তাঁর এই পোস্ট নতুন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে একটি বার্তা দিচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি যেকোনো সময় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন, এমনটি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা। তবে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ (সদস্যসচিব) কে দখল করবে, তা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। আখতার হোসেনের ফেসবুক পোস্টের পর এখন বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে যে সদস্যসচিবের দায়িত্ব তিনিই গ্রহণ করবেন।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তালিকার ১ নম্বরে ছিল নাহিদ ইসলামের নাম। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি উপদেষ্টা হন। অন্যদিকে, সরকার গঠনের তিন সপ্তাহ পরে মাহফুজ আলমকে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী করা হয়। গত নভেম্বরে তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হলে আখতার হোসেন এর সদস্যসচিব হিসেবে নিয়োগ পান।

মাহফুজ আলম ও আখতার হোসেন ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং তারা দুজন সহপাঠী ছিলেন। মাহফুজ ছাত্রসংগঠনের কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তবে ক্যাম্পাসে পাঠচক্র, পত্রিকা প্রকাশ, বুদ্ধিবৃত্তিক আড্ডা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে, আখতার ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে পরিচিত হন এবং ২০১৯ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পরে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।

নাহিদ ইসলাম ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে প্রার্থী হলেও বিজয়ী হতে পারেননি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে আখতার ও নাহিদের উদ্যোগে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে একটি নতুন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যেখানে আখতার কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক এবং নাহিদ সদস্যসচিব হন। মাহফুজ আলম ছাত্রশক্তির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলেও তিনি নিজে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত হননি।

গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনে মাহফুজ আলমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, এমন আলোচনা রয়েছে। বিষয়টি জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা প্রায়ই অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন। তরুণদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের গঠনের প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি, যার আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে ওই দিন বড় পরিসরে জমায়েত করার পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই।

নতুন দলের আত্মপ্রকাশের আগে শুক্রবার রাতে ফেসবুকে আখতার হোসেনের পোস্ট করা ছবি ও ক্যাপশন বিভিন্ন বার্তা প্রদান করছে। এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা প্রথম আলোকে জানান, ‘ছবিটি দেখার পর নাহিদ ও আখতারের নেতৃত্বেই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হবে, এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। এই দুজনের রাজনৈতিক ত্যাগ ও বোঝাপড়ার জায়গাটা পরিষ্কার। আমরা আশা করছি, এই রাজনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে দেশ ভালো কিছু পাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.