শীতের রাত। ‘ইত্যাদি’র শুটিংয়ের খবর শুনে ভিড় জমাতে থাকেন অসংখ্য মানুষ। একপর্যায়ে বিশাল জনস্রোত বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে, ফলে শুটিং সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে শুটিং পুনরায় শুরু হয়। ধারণক্ষমতার অনেক বেশি দর্শক জমায়েত হওয়ায় অনেকে আশপাশের ভবনের ছাদ, রাস্তা, দেয়াল ও গাছে উঠে শুটিং উপভোগ করেন। সেই ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার পর্বই আজ প্রচারিত হবে। রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেখা যাবে ‘ইত্যাদি’। অনুষ্ঠানটি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এবারের ‘ইত্যাদি’র বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফাগুন অডিও ভিশন। এবারের পর্বটি ধারণ করা হয়েছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। রানীশংকৈল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রাজা টংকনাথের রাজবাড়ির সামনে নির্মাণ করা হয় মঞ্চ।
উৎসবমুখর ঠাকুরগাঁওয়ে ‘ইত্যাদি’ শুটিং
ইত্যাদির শুটিং উপলক্ষে পুরো ঠাকুরগাঁও জুড়ে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে বসে জমজমাট মেলা, দোকানিরা সাজিয়ে রাখেন বিভিন্ন পণ্যের পসরা, এমনকি ছিল নাগরদোলাও। শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা পঞ্চগড় ও দিনাজপুর থেকেও দর্শক ভিড় করেন। বিকেল ৩টা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠানস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বাইরে অপেক্ষমাণ দর্শকের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়।
শুটিং চলাকালে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে হানিফ সংকেত প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু করি। রাত ৭টা ৩০ বা ৮টার দিকে আমি মঞ্চে উঠতেই দর্শকের মধ্যে উচ্ছ্বাস বাড়তে থাকে, যার ফলে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এরপর একটি নৃত্য পরিবেশনা ও রবি চৌধুরী ও লিজার গানের অর্ধেক চলাকালীন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শুটিং বন্ধ রাখতে হয় প্রায় দেড় ঘণ্টা। পরে রাত ৯টা ৩০ বা ১০টার দিকে পুনরায় শুটিং শুরু করে রাত ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চালিয়ে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয়রা অত্যন্ত আন্তরিক, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, “ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ ভালো।” আমি তখনই বলেছি, “আমি তো বলিনি ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ খারাপ। ভালো বলেই তো এখানে শুটিং করতে এসেছি।”’
বিশেষ আয়োজন ও চমক
এবারের ‘ইত্যাদি’র বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃতী সন্তান রাজনীতিবিদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার রাখা হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারটি পুরোপুরি অরাজনৈতিক, যেখানে তাঁর জীবনের অনেক অজানা দিক উঠে এসেছে।
সংগীত পরিবেশন করেছেন দুই প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পী রবি চৌধুরী ও লিজা। গানের কথা লিখেছেন লিটন অধিকারী রিন্টু, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন কিশোর দাশ। ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে মনিরুজ্জামান পলাশের লেখা একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে শতাধিক স্থানীয় নৃত্যশিল্পী অংশ নিয়েছেন। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন রোহিত খান, আর কণ্ঠ দিয়েছেন তানজিনা রুমা, রাজীব, অয়ন চাকলাদার ও সানজিদা রিমি। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত পরিচালনা করেছেন মেহেদী।
নাট্যাংশ ও ব্যঙ্গাত্মক পর্ব
অনুষ্ঠানে থাকছে সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা ও সামাজিক অসংগতির ওপর ব্যঙ্গাত্মক নাট্যাংশ। এবারের নাট্যাংশগুলোতে উঠে এসেছে—
- জ্যোতিষবিদ্যার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
- সময়ের বিবর্তনে ঘরোয়া ভাষার পরিবর্তন
- সবজিবাজারে বিভ্রান্ত ক্রেতার গল্প
- ইউটিউবের নেশায় পারিবারিক সংকট
- দিন যায়, কথা থাকে
- পারিবারিক শিক্ষা বনাম পারিপার্শ্বিক শিক্ষা
- চিৎকারসর্বস্ব উপস্থাপকের সাক্ষাৎকার
- বিবাহবার্ষিকীতে সেকালের উপহার
এতে অভিনয় করেছেন আবদুল আজিজ, বাবুল আহমেদ, সুভাশীষ ভৌমিক, মোমেনা চৌধুরী, সোলায়মান খোকা, শাহেদ আলী, মুকিত জাকারিয়া, আবদুল্লাহ রানা, মাহফুজুর রহমান, প্রাণ রায়, জয়রাজসহ অনেকে।
নাতিকে দেখা গেলেও অনুপস্থিত নানি!
ঠাকুরগাঁওয়ের মঞ্চে এবারের পর্বে নাতির উপস্থিতি থাকলেও দেখা যায়নি নানিকে। তবে সেই সাথিহারা নাতি কী করেছে, সেটাই দেখা যাবে আজকের ইত্যাদিতে।
Leave a Reply