জীবিকার তাগিদে গুলির ক্ষত বয়ে ভ্যান চালাচ্ছেন জাপুল

জীবিকার তাগিদে গুলির ক্ষত বয়ে ভ্যান চালাচ্ছেন জাপুল

গুলির ক্ষত বয়ে জীবিকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জাপুল সরদার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আহত জাপুল সরদার (৪৪) এখনো সেই ক্ষত শরীরে বয়ে নিয়ে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে স্ত্রী ও চার সন্তানসহ কঠিন সংকটে পড়লেও জীবিকার প্রয়োজনে তিনি ভ্যান চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জাপুল দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেই বড় হয়েছেন। বর্তমানে তিনি পার্শ্ববর্তী খাগড়াবাড়িয়া গ্রামের একটি সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অভাবের সংসার চালাতে তাকে কখনো কৃষিকাজ, কখনো ভ্যান-রিকশা চালাতে হয়েছে।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

জাপুল জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে কাঁচপুর থেকে যাত্রাবাড়ী থানার দিকে রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন। থানার সামনে পুলিশ-ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ চলছিল, গুলি ছোড়া হচ্ছিল। জীবন বাঁচাতে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু পেছন থেকে পুলিশের গুলি তার কোমরে লাগে।

প্রায় আধা ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকার পর স্থানীয়রা তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। মেয়ে সাথী খানম বাবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি জানান, তখন চারদিকে ধোঁয়া, বিস্ফোরণের শব্দ আর আতঙ্ক ছিল, বাবাকে খুঁজতে গিয়ে একাধিক হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছিল।

জীবনযুদ্ধ থেমে নেই

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করা হলেও এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি জাপুল। ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না, ক্ষতস্থানে অসহনীয় ব্যথা হয়। বড় ছেলে সংসারের হাল ধরতে ভ্যান চালায়, আর ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়ে। বড় মেয়ের সংসার ভেঙে যাওয়ায় সে কন্যাসন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতেই ফিরে এসেছে।

সংসারের খরচ চালাতে বাধ্য হয়ে একটি ভ্যান কিনে রাস্তায় নেমেছেন জাপুল। তিনি বলেন, “আমি কোনো রাজনীতি করিনি, তবু পুলিশ আমাকে গুলি করল! আমার কী অপরাধ ছিল?”

সহায়তার প্রতিশ্রুতি

আহত জাপুলকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন, জেলা জামায়াত ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জান্নাত জানান, জাপুলের পরিবারকে নজরে রাখা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তা পেলে তিনি তা পাবেন।

জাপুল সরদার আজও তার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়। তবে এখনো তিনি ন্যায়বিচারের আশায় আছেন—পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার জন্য দায়ীদের বিচার চান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.