সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গতকাল শুক্রবার আরব বিশ্বের সাতটি দেশের নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হন। তাঁদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার যুদ্ধ–পরবর্তী ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রূপরেখা নির্ধারণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে গাজা নিয়ে তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যেখানে যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবের মধ্যে গাজা থেকে জোরপূর্বক বাসিন্দাদের উচ্ছেদের মতো বিতর্কিত বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর প্রতিবাদেই রিয়াদে জরুরি বৈঠকে বসেন আরব নেতারা।
আরব নেতারা ট্রাম্পের গাজার নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের মতে, এটি ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের বহু বছরের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবে এবং গাজার বাসিন্দাদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। একই সঙ্গে এই পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতাকে আরও প্রলম্বিত করতে পারে।
আগামী ৪ মার্চ মিসরের কায়রোতে আরব লীগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। রিয়াদের বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা আশাবাদী যে ওই সম্মেলনে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আহ্বানে আয়োজিত এই বৈঠকে অংশ নেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, কুয়েতের আমির শেখ মেশাল আল-আহমাদ আল-সাবাহ এবং বাহরাইনের যুবরাজ সালমান বিন হামাদ আল খলিফা।
বৈঠক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দেশই বিস্তারিত কিছু জানায়নি। আরব নেতারা কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় একমত হয়েছেন কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
রিয়াদ থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক হাশেম আহেলবাররা জানান, বৈঠকের সূচনা হয় মিসরের গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা উপস্থাপনের মাধ্যমে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে তিন পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে এই পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল।
এই চুক্তির প্রথম পর্যায় বাস্তবায়িত হয়েছে, যার ফলে আপাতত যুদ্ধ বন্ধ রয়েছে এবং হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্দিবিনিময় চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে বন্ধের উদ্যোগ, আর তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, কায়রো বৈঠকের আগেই মিসরের পরিকল্পনার ভিত্তিতে আরব নেতারা সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং মার্কিন প্রশাসনের প্রস্তাবের কার্যকর বিকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে।
কায়রো এখনো গাজার পুনর্গঠনের প্রাথমিক পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। তবে মিসরের সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ হেগাজি একবার জানান, এই পরিকল্পনা তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
হেগাজির মতে, প্রথম পর্যায়ে ছয় মাসের মধ্যে ‘প্রাথমিক পুনরুদ্ধার’ ও ধ্বংসাবশেষ অপসারণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
Leave a Reply