“ঢাকায় জিপি-ক্লিনিক থেকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা”

“ঢাকায় জিপি-ক্লিনিক থেকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা”

রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার লক্ষ্যে সরকার ১০০টির বেশি ‘জিপি-ক্লিনিক’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব ক্লিনিক থেকে রোগীরা বিনা মূল্যে রোগ পরীক্ষা করাতে পারবেন এবং ওষুধও পাবেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আগে এসব ক্লিনিকে যেতে হবে, যেখানে চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে রোগীকে হাসপাতালে পাঠাবেন।

জিপি-ক্লিনিক চালুর এই উদ্যোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার দেশে রেফারেল পদ্ধতি প্রবর্তন করতে চায়।

ঢাকায় ১০০টির বেশি জিপি-ক্লিনিক খোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে রোগীদের বিনা মূল্যে পরীক্ষা ও ওষুধের ব্যবস্থা থাকবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, রেফারেল পদ্ধতি চালু হলে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে শৃঙ্খলা আসবে এবং সেবার মান উন্নত হবে। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসকের সুপারিশের ভিত্তিতে রোগী হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা পাবেন। এর ফলে সরকারি হাসপাতালে ভিড় কমবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ১৭ ফেব্রুয়ারি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্রের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ‘জিপি’ বা জেনারেল প্র্যাকটিশনার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। জেনারেল প্র্যাকটিশনাররা সরকারের স্বীকৃত চিকিৎসক এবং তারা নির্দিষ্ট এলাকায় মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের উন্নত হাসপাতালে রেফার করা হয়।

বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার সুবিন্যস্ত কাঠামো রয়েছে, যেমন কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। তবে শহরে এ ধরনের স্বাস্থ্য কাঠামোর অভাব রয়েছে, যা ঢাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, নগরবাসীর কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এসব কেন্দ্রে ১২ থেকে ১৪ ধরনের রোগের পরীক্ষা হবে এবং অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ সরবরাহ করা হবে। রোগীদের বিশেষায়িত হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হবে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগী নিবন্ধন করা হবে।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি জিপি-ক্লিনিক স্থাপন করা হবে, এবং মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে এই সংখ্যা বাড়তে পারে। জিপি-ক্লিনিক থেকে পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে:

১. প্রতিরোধমূলক সেবা (টিকাদান, রোগ শনাক্তকরণ, স্বাস্থ্যশিক্ষা)
২. মৌলিক নিরাময় সেবা (মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা)
৩. মৌলিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
৪. মৌলিক ওষুধ সেবা
৫. রেফারেল সেবা (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করা এবং হাসপাতাল ভর্তি)

প্রতিটি জিপি-ক্লিনিক হবে একটি ছোট, স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতালের মতো, যেখানে ১১ জন জনবল থাকবে, তাদের মধ্যে ৪ জন চিকিৎসক, ২ জন নার্স, মিডওয়াইফ, ওষুধবিদ, প্যারামেডিক, ল্যাব টেকনিশিয়ান এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকবে।

ধারণাপত্র অনুযায়ী, সপ্তাহে পাঁচ দিন (শনিবার থেকে বুধবার) ক্লিনিক খোলা থাকবে এবং সেখানে রোগীদের পরিচিতিপত্রের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হবে। হৃদরোগ, কিডনি রোগ, ক্যানসার, স্নায়ুরোগ বা অর্থোপেডিক চিকিৎসার জন্য রোগীদের সরকারি হাসপাতালে রেফার করা হবে।

জিপি-ক্লিনিকে সকলেই যেতে পারবেন, তবে বিশেষভাবে দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে জনস্বাস্থ্যবিদ এবং ওয়াটারএইড সাউথ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম স্বাগত জানিয়েছেন, এবং বলেছেন, কিছু ওয়ার্ডে একাধিক জিপি-ক্লিনিক প্রয়োজন হবে যাতে সন্ধ্যার পরও মানুষ সেবা নিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.