“নারী শিল্পীরাই কেন বারবার হামলার শিকার?”

“নারী শিল্পীরাই কেন বারবার হামলার শিকার?”

নারী তারকাদের বাধার মুখে পড়ার প্রবণতা

মেহজাবীন চৌধুরী, পরীমনি ও অপু বিশ্বাস—তিন মাসের ব্যবধানে তিনজন জনপ্রিয় নারী তারকা শোরুম ও রেস্তোরাঁ উদ্বোধনে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভাবিয়ে তুলছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে।

সাম্প্রতিক ঘটনা

গত মঙ্গলবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে একটি রেস্তোরাঁ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের। তবে সামাজিক মাধ্যমে কিছু ধর্মীয় নেতার আপত্তি এবং স্থানীয় কিছু মানুষের বিরোধিতার কারণে আয়োজকেরা শেষ মুহূর্তে তাঁকে আমন্ত্রণ বাতিল করতে বাধ্য হন।

এর আগে, চট্টগ্রামে একই ধরনের বাধার মুখে পড়েন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী এবং টাঙ্গাইলে পরীমনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নায়িকা আসার সংবাদে আপত্তি জানাচ্ছেন এবং আয়োজকদের চাপ দিচ্ছেন আমন্ত্রণ বাতিল করার জন্য।

শিল্পীদের প্রতিক্রিয়া

পরীমনি এ বিষয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ২৫ জানুয়ারি এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “এত চুপ করে থাকা যায় নাকি? পরাধীন মনে হচ্ছে। শিল্পীদের এত বাধা কেন আসবে? ইনসিকিউর ফিল হচ্ছে। এমন স্বাধীন দেশে নিরাপদ নই কেন আমরা?”

অন্যদিকে, অপু বিশ্বাস ও মেহজাবীন চৌধুরী এখনো এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

বিশ্লেষণ

এই ঘটনা কেন ঘটছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা মনে করেন, এটি নারীদের দমিয়ে রাখার একটি প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, “নারী ফুটবলারদের খেলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতোই এটি নারীদের নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল।”

নির্মাতা আশফাক নিপুন মনে করেন, “এই রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। কিছু ধর্মীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী স্বাধীনচেতা নারী ও আধুনিক সমাজকে ভয় পায় এবং সেটাকে দমিয়ে রাখতে চায়।”

প্রতিহত করার আহ্বান

অভিনয় শিল্পী সংঘ এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। আজ তাদের সাধারণ সভায় বিষয়টি তোলা হবে এবং একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করা হবে।

সরকারি ও সামাজিকভাবে এই ধরনের বাধাকে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, “রাষ্ট্রকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কোনো গোষ্ঠী এমন আচরণ করার সাহস না পায়।”

নির্মাতা আশফাক নিপুন মনে করেন, “স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে পার্থক্য আছে। যারা এই বাধা দিচ্ছে, তারা স্বেচ্ছাচারিতা করছে। এটি প্রতিহত করা দরকার।”

উপসংহার

নারী তারকাদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার ঘটনা কেবল বিনোদন জগতের জন্য নয়, সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্যও উদ্বেগজনক। এর বিরুদ্ধে সামাজিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.