ফ্রান্সের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত ধর্ষণ মামলা এটি। ভুক্তভোগীর পরিচয় ও সামাজিক মর্যাদার কারণে দেশটিতে সাধারণত এ ধরনের মামলার বিচারকাজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে না। তবে ভুক্তভোগী গিস লের অনুরোধে এই মামলার বিচারকাজ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
১৫ সপ্তাহের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে গত বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এতে গিস লের সাবেক স্বামী ও মামলার প্রধান আসামি ডোমিনিক পেলিকোতকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ফ্রান্সের অ্যাভিগনোন শহরের একটি আদালতে।
এছাড়া আরও ৫০ জন আসামিকে ৩ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার মধ্যে দুজনের সাজা স্থগিত করা হয়েছে।
ডোমিনিক গিস লেকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করতেন এবং অন্য পুরুষদের দিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করাতেন। এই অত্যাচার প্রায় এক দশক ধরে চলেছে এবং গিস লের সঙ্গে ৯২ বার এমন ঘটনা ঘটেছে। ডোমিনিক অনলাইনে এসব অপরাধীদের ঠিক করতেন।
বিচার ও রায় নিয়ে বিতর্ক
গত সেপ্টেম্বরে মামলার বিচার শুরু হয়। রায়ের পর ভুক্তভোগীর পরিবার ও কৌঁসুলিরা আশানুরূপ শাস্তি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
গিস লের পরিবারের একজন সদস্য এএফপিকে বলেন, “ডোমিনিককে লঘু শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটি গিস লের সন্তানদের জন্য হতাশাজনক।”
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
রায় ঘোষণার পর মামলাটি নিয়ে এখনো কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে।
গিস লে এখন কী করবেন?
গিস লে এখন ফ্রান্সজুড়ে পরিচিত নাম। তিনি ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তাঁর সাবেক স্বামীর পদবী ‘পেলিকোত’ আর ব্যবহার করবেন না। তবে এতো আলোচিত হওয়ার পর তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব হবে কি না, সেটি অনিশ্চিত।
ক্যারোলিনের সঙ্গে কী হয়েছিল?
ডোমিনিকের অপরাধ প্রকাশ পাওয়ার পর তাঁর মেয়ে ক্যারোলিন ডারিয়ানকে পুলিশ তলব করে। তাঁকে কিছু ছবি দেখানো হয়, যেখানে এক নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখা যায়। ছবিতে নিজেকে আবিষ্কার করে ক্যারোলিন বলেন, তাঁর জীবন যেন থমকে গিয়েছিল।
ডোমিনিক মেয়েকে স্পর্শ করার অভিযোগ অস্বীকার করলেও ক্যারোলিন আদালতে জানিয়েছেন, তাঁর পিতার প্রতি তিনি আর কোনো বিশ্বাস রাখতে পারেন না।
কতজন আসামি আপিল করবেন?
মামলার রায়ের পর কিছু আসামি আপিল করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে দুই ব্যক্তি আপিল করেছেন, যাঁদের ৮ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
১২ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক ব্যক্তির আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলও আপিল করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল করবেন।
সংক্ষেপে
এই মামলার রায় নিয়ে ফ্রান্সজুড়ে আলোচনা চলমান। ভুক্তভোগীর পরিবার আশানুরূপ বিচার না পাওয়ার হতাশা প্রকাশ করেছে, আর আসামিদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলার ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
Leave a Reply