শহরের ভেতরে আরেক শহর—হংকংয়ের কাউলং একসময় ছিল সামরিক দুর্গ। ১৮৯৮ সালে হংকং ইজারা নেওয়ার পর এটি ছিটমহলে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হংকং দখলের ফলে এর জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশকের মধ্যে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করত। ১৯৮৭ সালে ব্রিটিশ হংকং সরকার শহরটি ধ্বংসের পরিকল্পনা নেয়। অধিবাসীদের উচ্ছেদের পর সেখানে নির্মাণ করা হয় উদ্যান, আর কিছু ভবনের ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত রাখা হয়।
এই রহস্যময় কাউলংয়ের অপরাধজগতের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমা ‘টোয়াইলাইট অব দ্য ওয়ারিয়র্স: ওয়ালড ইন’। গত বছর এটি চীনের বক্স অফিসে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ১০ সিনেমার একটি ছিল। হংকংয়ের বক্স অফিসে এটি সর্বকালের ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
সোই ছেং পরিচালিত এই অ্যাকশন সিনেমা মার্শাল আর্টের অসাধারণ প্রদর্শনী নিয়ে এসেছে। বার্লিন ও কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর সিনেমা নিয়মিত প্রদর্শিত হয়। ‘টোয়াইলাইট অব দ্য ওয়ারিয়র্স: ওয়ালড ইন’ প্রথম দেখানো হয় কান উৎসবের মিডনাইট স্ক্রিনিং বিভাগে, যেখানে সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল। হংকং থেকে অস্কারে পাঠানো হলেও এটি চূড়ান্ত মনোনয়ন পায়নি। গত ২৪ জানুয়ারি ভারতে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি, যা এখন অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে ভাড়ায় দেখা যাচ্ছে।
সিনেমার কাহিনি চান লোক নামের এক শরণার্থীর জীবনের টানাপোড়েন ঘিরে। পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো এই ব্যক্তি পরিচয়পত্র পেতে মরিয়া। প্রতিশ্রুতি পেলেও সবাই তাকে ফাঁকি দেয়। একদিন, যখন সে বুঝতে পারে এবারও প্রতারিত হচ্ছে, তখন এক কারখানা থেকে একটি বস্তা চুরি করে। ধাওয়া খেয়ে শেষমেশ সে পৌঁছে যায় কুখ্যাত কাউলং শহরে। সেখান থেকে কি সে পালাতে পারবে, নাকি অপরাধজগতের অংশ হয়ে যাবে?
‘টোয়াইলাইট অব দ্য ওয়ারিয়র্স: ওয়ালড ইন’ শুধু বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি, সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। রটেন টমেটোজে ৩৭টি পর্যালোচনার মধ্যে ৯২ শতাংশ ইতিবাচক, গড় রেটিং ৭.৮। মেটাক্রিটিকে স্কোর ৭৭। দুর্দান্ত মার্শাল আর্ট ও আশির দশকের হংকংয়ের বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার জন্য পরিচালক প্রশংসিত হয়েছেন। ইতিমধ্যে এটি হংকং ফিল্ম ক্রিটিকস সোসাইটি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে।
পরিচালক সোই ছেং চলচ্চিত্রবিষয়ক গণমাধ্যম ডেডলাইনে বলেন, ‘আমি কখনো কাউলং সিটিতে যাইনি, তবে সেখানে থাকা অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে পর্দায় সেই শহর পুনর্নির্মাণ করাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
সিনেমাটি একই নামের একটি গ্রাফিক নভেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। নির্মাতা জানান, তিনি বাস্তবধর্মী অ্যাকশন সিনেমার বদলে গ্রাফিক নভেলের পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।
‘টোয়াইলাইট অব দ্য ওয়ারিয়র্স: ওয়ালড ইন’-এর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন লুইস কু, সামো হুং, রেমন্ড ল্যাম এবং কেনি ওং।
Leave a Reply