মেঘনার শাখা খাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিএনপি নেতা পরিচয়ে পরিচিত

মেঘনার শাখা খাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিএনপি নেতা পরিচয়ে পরিচিত

নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীর চর ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভূমিহীন বিবি মরিয়ম (৫০) সেখানে দুই একর জমির বন্দোবস্ত পান। জমির এক পাশে তিনি কলাগাছ লাগিয়েছেন, ইচ্ছে ছিল সেটি ভরাট করে বসতি গড়ার। তবে চরের পাশে মেঘনার শাখা খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু তোলার কারণে তাঁর সেই স্বপ্ন এখন হুমকির মুখে।

গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে একটি চক্র ১৪-১৫ জন মিলে মেঘনার ওই শাখা খাল থেকে অবাধে বালু তুলছে। তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক নেতার পরিচয় দিলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা জানিয়েছেন, তাঁদের কোনো পদ-পদবি নেই।

বিবি মরিয়ম প্রথম আলোকে জানান, তাঁর বন্দোবস্ত পাওয়া চর থেকেও বালু তোলার খবর পেয়ে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। তখন বালু উত্তোলনকারী ব্যক্তিরা তাঁকে হামলার শিকার করেন। পরে তাঁরা বালু তোলা বন্ধের আশ্বাস দিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করলেও বালু তোলা বন্ধ হয়নি। তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও কোনো সমাধান পাননি। ইতিমধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে হাতিয়া থানায় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

গত রোববার হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের লেংড়ার দোকান এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দুটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে মরিয়মের বন্দোবস্ত পাওয়া জমিসহ আশপাশের এলাকায় খাল থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সাংবাদিকের উপস্থিতির খবর পেয়ে আরিফ নামে এক ব্যক্তি ড্রেজারের পাম্প বন্ধ করে দেন। খালে কাজ করছিলেন মো. বেলায়েতও, তিনিও দ্রুত তীরে উঠে যান। বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা কোনো উত্তর না দিয়ে সরে পড়েন।

স্থানীয়দের মতে, শুধু লেংড়ার দোকান নয়, আশপাশের অন্তত ১০টি স্থানে একইভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসনের নজর এড়াতে এখন রাতে বালু তোলা হয়, আর দিনে তা বিভিন্ন যানবাহনে পরিবহন করে বিক্রি করা হয়। এসব বালু ডোবা, পুকুর ভরাটসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবাদ করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখান।

হরণী উত্তর জোড়খালী এলাকার বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, আগের সরকারের সময়ও কিছু ব্যক্তি বালু তুলেছিলেন, কিন্তু প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যায়। আরেক বাসিন্দা মো. খালেক বলেন, ‘দিনরাত যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে, ভয় হয় কখন জানি বাড়িঘর ধসে পড়ে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত মেরাথল হোসেন জানান, তাঁরা ২০ হাজার ঘনফুট বালু তুলেছেন, তবে এখন আর তুলছেন না। ড্রেজারসহ যন্ত্রপাতিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাঁদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত আছেন। তবে বিবি মরিয়মের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন। বিএনপির পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়ার হরণী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন ওরফে দোলন জানান, তাঁর ইউনিয়নের কিছু এলাকায় কিছু ব্যক্তি দলের নাম ব্যবহার করে বালু তুলছেন বলে তিনিও শুনেছেন। তাঁদের নিষেধ করা হলেও তাঁরা কথা শুনছেন না।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী শামীম জানান, তিনি সম্প্রতি যোগদান করেছেন এবং এ বিষয়ে অবগত নন। তবে দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.