যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের পাইকারি দাম একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে। বিশেষ করে ডিম দেয়—এমন মুরগির মধ্যে বার্ড ফ্লু আরও ছড়িয়ে পড়ার কারণে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। আর বাজারে ডিমের সরবরাহ কমেছে এমন এক সময়ে, যখন ক্রিসমাস ও অন্যান্য উৎসবজনিত ছুটিকে সামনে রেখে কেক বানাতে মানুষ ডিম কেনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
মার্কিন ভোক্তারা এমনিতেই মূল্যস্ফীতি নিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে অনেক পণ্যের মূল্য আরও বাড়বে—এমন আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটছে ভোক্তাদের। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর মেক্সিকো ও চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সেই হুমকি বাস্তবায়ন করলে পণ্যের দাম বাড়বে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় গত বুধবার বড় ডিমের পাইকারী দাম ডজনপ্রতি ৫ ডলার ৫৭ সেন্টে উঠেছে। এক বছর আগের তুলনায় এই দাম ১৫০ শতাংশ বেশি। এর আগে ডিমের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তখন প্রতি ডজন বড় ডিম রেকর্ড ৫ ডলার ৪৬ সেন্টে বিক্রি হয়েছে বলে উপাত্ত সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান এক্সপানা জানিয়েছে।
ডিমের দাম অবশ্য আরও বেশি বেড়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরের রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায়। সেখানে আইন রয়েছে, ডিম দেয়—এমন মুরগি খাঁচায় রেখে পালন করা যাবে না, ফলে ওই রাজ্যে ডিমের সরবরাহে আরও বেশি ঘাটতি হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন প্রতি ডজন ডিমের দাম ৮ ডলার ৮৫ সেন্ট হয়েছে বলে এক্সপানা জানিয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এক ডজন ডিমের দাম পড়ছে ১ হাজার ৬২ টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)।
বার্ড ফ্লু রোগের ব্যবস্থাপনায় যেসব কৃষক সফল হয়েছেন এবং যাঁরা নির্দিষ্ট দামে দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ প্রতিশ্রুতিতে আটকে নেই, তাঁদের জন্য এই দাম রীতিমতো সমৃদ্ধি বয়ে এনেছে। অনেক বড় খুচরা দোকান কৃষকদের কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদে সরবরাহ প্রতিশ্রুতি নিয়ে থাকে, যাতে তারা দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারে। তবে ভোক্তাদের বেশি দাম দিতেই হচ্ছে।
গত নভেম্বরে প্রতি ডজন ডিমের দাম গড়ে ৩ ডলার ৬০ সেন্ট ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের শুরুতে এই ডিমের দাম ছিল ২ ডলার ৫০ সেন্ট। ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিসটিকসের উপাত্ত ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু সেপ্টেম্বরে ডিমের গড় দাম বেশি ছিল, প্রতি ডজন ৩ ডলার ৮০ সেন্ট।
দাম আরও বাড়তে পারে
পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে ডিম কিনতে হলেও খুচরা বিক্রেতারা বাড়তি দাম ক্রেতাদের ওপর খুব বেশি চাপিয়ে দিচ্ছেন না। অংশত এর কারণ হলো, ছুটির এই মৌসুমে তাঁরা ক্রেতাদের আতঙ্কিত করে তুলতে চান না। এক্সপানার ডিমবিষয়ক ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ক্যারিন রিসপলি মনে করেন, নতুন বছরে বিক্রেতারা ডিমের দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন।
মার্কিন পণ্য বিক্রেতা কোম্পানি জায়ান্ট ওয়াশিংটন ও বাল্টিমোর এলাকায় জানুয়ারি মাসে বিক্রি বাড়াতে বিশেষ প্রচারণা শুরু করার পরিকল্পনা করেছিল। এখন তারা সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। জায়ান্টের একজন পরিচালক এরিক উইনিনক বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না যে দাম ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে বার্ড ফ্লু ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। ফলে ডিম পাড়া মুরগির বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। ২০২২ সালে চলতি দফায় বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার পর ৪৯টি রাজ্যে প্রায় ১২ কোটি ৩০ লাখ মুরগি, টার্কি ও অন্যান্য গৃহপালিত পাখি মারা গেছে। এই বার্ড ফ্লুর কারণেই দেশটিতে এখন ডিমের দাম বেড়েই চলেছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ডিম পাড়া মুরগির সংখ্যা ছিল ৩১ কোটি ৫০ লাখ, যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ কম। এ সময় ডিমের উৎপাদন ৪ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ। ২০২৫ সালে ডিমের উৎপাদন ও রপ্তানি কমবে বলে সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছ। জানিয়েছে, ডিমের দাম আরও বাড়তে পারে।
আক্রান্ত হচ্ছে মানুষও
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৫০ লাখ ডিম পাড়া মুরগি মেরে ফেলতে হয়েছে। এসব মুরগির অর্ধেকই আক্রান্ত হয়েছে গত তিন মাসে। এ মাসে আইওয়া রাজ্যে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত ৪২ লাখ মুরগি মেরে ফেলা হয়েছে। যেসব রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদিত হয়, আইওয়া সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের উপাত্তে দেখা গেছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬১ জন মানুষ বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষণগুলো ছিল বেশ মৃদু। তবে লুইজিয়ানায় একটি ক্ষেত্রে লক্ষণ খুব শক্তিশালী ছিল। পাখি ও গরুকে বার্ড ফ্লু থেকে রক্ষা করতে পারে—এমন টিকা উদ্ভাবনে মার্কিন কৃষি বিভাগ এখন গবেষণায় তহবিল জোগাচ্ছে। সূত্র : রয়টার্স
Leave a Reply