লিবিয়ায় ২৩টি লাশ উদ্ধার: ঢাকা থেকে ইতালি যেতে ১৬ লাখ টাকার ‘বডি কন্ট্রাক্ট’

লিবিয়ায় ২৩টি লাশ উদ্ধার: ঢাকা থেকে ইতালি যেতে ১৬ লাখ টাকার ‘বডি কন্ট্রাক্ট’

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি: দালালের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত বহু পরিবার

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারানো সুজন হাওলাদারের স্ত্রী মুন্নী বেগমের কান্না থামছে না। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি এলাকায় চলছে শোকের মাতম।

স্থানীয় দালালের প্রতারণায় ইতালির স্বপ্ন দেখা কুদ্দুস ব্যাপারী (৩৩) ছয় মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আসেন। পরে দালাল মনিরের লোভনীয় প্রস্তাবে রাজি হয়ে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার চুক্তি করেন ১৬ লাখ টাকার ‘বডি কন্ট্রাক্ট’-এ।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার অন্যতম পথ লিবিয়া, যেখানে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ছোট নৌকাগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়। দালালদের প্রতারণামূলক ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ চুক্তির ফাঁদে পড়ে অনেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হন। কুদ্দুস ও তাঁর ভগ্নিপতি সুজন হাওলাদার সেই পথ বেছে নেন, যার মাশুল দিতে হয়েছে জীবন দিয়ে।

দালাল মনিরের চাপে কুদ্দুস দুই বিঘা জমি বিক্রি করে মনিরের স্ত্রীর নামে লিখে দেন। কিন্তু নৌকাডুবির পর থেকে তাঁর আর কোনো সন্ধান মেলেনি। সুজন হাওলাদারের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে তাঁর স্ত্রী।

মনির শেখ, যিনি একসময় দরজি ছিলেন, এখন মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাতারাতি সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাঁর জামাতারা লিবিয়ার মাফিয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত। এলাকায় তিনি ‘মাফিয়া মনির’ নামে পরিচিত।

লিবিয়ায় ২৩ জনের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর মনির আত্মগোপনে চলে গেছেন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর আহাজারি আর প্রতারণার শিকার মানুষগুলোর আর্তনাদ এখন ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছে।

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, মানব পাচারকারীদের ধরতে অভিযান চলছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়, এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আরও কত পরিবার এমন মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published.