রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে বিদেশি গার্মেন্টস এবং দেশীয় সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং) এজেন্টদের যোগসাজশে অন্তত ২৬০ কোটি টাকার সরকারি শুল্ক আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে ১০ জন চক্রের সদস্য। আত্মসাৎ করা অর্থের একটি অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে, আর বাকি অংশ দিয়ে দেশে কেনা হয়েছে বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়ি, কৃষিজমি এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ। এই চক্রের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছে। তদন্তে জানা গেছে, এসব ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
সরকার রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পকে সহায়তা দিতে বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দেয়। তবে শর্ত থাকে, এসব কাঁচামাল কেবলমাত্র রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হবে এবং খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু, সাভার ডিইপিজেডে (ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চীনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম ভেঙে এই সুবিধার অপব্যবহার করেছে।
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের অনুমোদিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্পিডওয়ে লজিস্টিকস লিমিটেড ও এএফটি লজিস্টিকস লিমিটেড শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। স্পিডওয়ে লজিস্টিকসের স্বত্বাধিকারী এবং এএফটি লজিস্টিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খসরুল আলমসহ তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে এই অনিয়ম চালিয়ে আসছেন। ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তারা বন্ড সুবিধায় আনা বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে সরকারের ২৬০ কোটি টাকার বেশি শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন।
সিআইডির মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- স্পিডওয়ে লজিস্টিকস লিমিটেডের মালিক মো. খসরুল আলম, তার ভাই ও এএফটি লজিস্টিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. খায়রুল আলম, প্রতিষ্ঠান দুটির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের ছয়জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মামলার তদন্তে তাদের নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
তদন্তে আরও জানা যায়, খসরুল আলমের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, তার ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ৮৪টি গাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট, জমি ও অন্যান্য ব্যবসা। একইভাবে, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের গ্রুপ ডাইরেক্টর (অপারেশন) মো. তানভীর হোসেন ও তার স্ত্রী সামীমা হোসেনের নামে ৭৪ কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তানভীরের নামে অস্ট্রেলিয়ায় অন্তত আটটি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্পিডওয়ে লজিস্টিকস লিমিটেড ও এএফটি লজিস্টিকস লিমিটেডের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। সিআইডি জানিয়েছে, অভিযুক্তদের সম্পদের হিসাব তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিডওয়ে লজিস্টিকস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. খসরুল আলম দাবি করেন, তিনি কোনো অনিয়মে জড়িত নন এবং আদালতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। অপরদিকে, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টসের এক কর্মকর্তা বলেন, তারা শুধুমাত্র চাকরি করেন এবং নীতিনির্ধারকদের ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না।
তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
Leave a Reply