সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর দেশটির জনগণ নতুন আশার আলো দেখেছিল। তবে ক্রমে সেই আশা ম্লান হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সহিংসতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, দেশটিতে শান্তি শিগগিরই ফিরে আসছে না। কারণ, সরকারকে শুধু আসাদপন্থিদের নয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তির বিরুদ্ধেও লড়তে হচ্ছে। এসব শক্তি সিরিয়াকে স্থিতিশীল হতে দিতে চায় না।
লন্ডনভিত্তিক পত্রিকা ‘আশারক আল-আওসাত’-এর নির্বাহী সম্পাদক ইয়াদ আবু শাকরার এক নিবন্ধে সিরিয়ার সংকটে তিন দেশের ষড়যন্ত্রের চিত্র ফুটে উঠেছে।
তিনি লিখেছেন, বাশার আল-আসাদের শাসনের সমাপ্তি এবং ইরানের আঞ্চলিক আধিপত্য নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার পর তেহরান দ্রুত ভারসাম্য ফিরে পায় এবং পাল্টা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর ফলে সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিবর্তনের গতি ব্যাহত হয়। ইরান মূলত ইসরায়েলের কাছে লেবাননে পরাজয়ের পরও আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঠেকাতে ইসরায়েল তার ভূরাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়ন করছে। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের শাসকগোষ্ঠী অপসারণে আগ্রহী নয়। এর একটি কারণ হলো, ফিলিস্তিনি ঐক্য বিনষ্টে এবং আন্দোলনকে দুর্বল করতে ইরানের ভূমিকা।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ার ভূখণ্ডের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। অঞ্চলটির বিভাজন ও সামাজিক অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা। বিশেষ করে, তারা সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিভেদকে উসকে দিচ্ছে এবং নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে।
এ ছাড়া সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রকল্প এক নতুন সংকট তৈরি করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ এ অঞ্চল মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে ইরান ও তুরস্কও ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত। সিরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার যত দুর্বল হবে, কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ততই বাড়বে। ফলে দেশের আরব পরিচয় ও জাতীয় সংহতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
Leave a Reply