সুরা কাওসার (প্রাচুর্য) পবিত্র কোরআনের ১০৮তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এতে রয়েছে ১ রুকু এবং ৩টি আয়াত। যখন শত্রুরা অপুত্রক হওয়ার কারণে মহানবী (সা.)-কে বিদ্রূপ করেছিল, তখন আল্লাহ তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি তাঁকে অফুরন্ত কল্যাণ দান করেছেন এবং তাঁর প্রতি নামাজ ও কোরবানি আদায়ের নির্দেশ দেন। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর শত্রুরাই হবে নাম-নিশানাহীন।
সুরার প্রেক্ষাপট:
মহানবী (সা.)-এর শিশুপুত্র মারা যাওয়ার পর কাফেররা এতে আনন্দ প্রকাশ করেছিল এবং বলাবলি করছিল যে, তিনি নির্বংশ হয়ে গেছেন। সাধারণত পুত্রসন্তানের মাধ্যমে বংশধারার সম্মান ও ঐতিহ্য টিকে থাকে। কাফেররা মনে করেছিল, মহানবী (সা.)-এর উত্তরাধিকার থাকবে না, ফলে তাঁর নাম ও বংশধারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ এই সুরাটি নাজিল করেন।
সুরার মূল বার্তা:
১. প্রথম আয়াত:
আল্লাহ বলেন, “আমি তো তোমাকে কাওসার (অফুরন্ত কল্যাণ) দান করেছি।”
এতে বোঝানো হয়েছে, মহানবী (সা.)-কে বিশেষ নেয়ামত হিসেবে কাওসার দান করা হয়েছে, যা জান্নাতের একটি নহর। এটি শুধু আখিরাতের নেয়ামতই নয়, বরং দুনিয়াতেও নবুওয়াত, কোরআন, জ্ঞান ও অসংখ্য কল্যাণ এতে অন্তর্ভুক্ত।
২. দ্বিতীয় আয়াত:
“সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি দাও।”
এতে মহানবী (সা.)-কে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য নামাজ ও কোরবানির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি দেখায় যে, ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা উচিত, লোক দেখানোর জন্য নয়।
৩. তৃতীয় আয়াত:
“তোমার শত্রুই নির্বংশ হবে।”
আল্লাহ এখানে নবী (সা.)-এর শত্রুদের পরিণতির কথা বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর শত্রুরাই ইতিহাসে অজ্ঞাত ও অসফল থেকে গেছে, আর মহানবী (সা.)-এর নাম পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সুরা কাওসারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
১. মহানবী (সা.)-এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ—কাওসার দান।
2. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য নামাজ ও কোরবানির নির্দেশ।
3. শত্রুদের পরিণতি—তারা নির্বংশ ও নিঃশেষ হয়ে যাবে।
(সূত্র: সুরা কাওসার, আয়াত ১–৩, কোরআন শরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন)
Leave a Reply