সম্প্রতি ইউরোপ ও আমেরিকার সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে এটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং ইউরোপের অভ্যন্তরীণ সামাজিক সমস্যাগুলি উঠে আসে। তাঁর বক্তব্যে ইউরোপের মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়, যার প্রতিক্রিয়া জানাতে ইউরোপীয় নেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানান।
কী বলেছেন ভ্যান্স
সম্মেলনটি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং এর ইউরোপীয় প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ভ্যান্স ইউরোপের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বিশেষ করে, তিনি ইউরোপের গণতন্ত্র এবং মৌলিক মূল্যবোধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ইউরোপের সবচেয়ে বড় হুমকি রাশিয়া বা চীন নয়, বরং অভ্যন্তরীণভাবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।”
ভ্যান্স আরও বলেন, “আমি ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি, কিন্তু তারা আসলে কী রক্ষা করতে চায়? শুধুমাত্র নিজের নিরাপত্তা, না কি তাদের মৌলিক মূল্যবোধও রক্ষা করতে চায়?”
ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, “মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউরোপের পরিস্থিতিকে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা অগ্রহণযোগ্য।” তিনি আরও বলেন, “এটি সেই ইউরোপ নয়, যেখানে আমি বাস করি। এটি সেই গণতন্ত্র নয়, যেখানে আমি নির্বাচন পরিচালনা করি।”
মার্কিন সিনেটর অ্যান্ডি কিমও ভ্যান্সের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “ভ্যান্সের মন্তব্য ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াবে এবং আমাদের শত্রুদের উৎসাহিত করবে।”
ইউক্রেন বিষয়ক আলোচনা
সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। ভ্যান্স এবং অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা এবং শান্তির জন্য স্থায়ী সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন।
ভ্যান্স বলেন, “আমরা চাই যুদ্ধ থেমে যাক, তবে শান্তি হতে হবে স্থায়ী এবং নিরাপদ, যাতে ইউরোপ ভবিষ্যতে আরও সংঘাতে না জড়ায়।”
ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বেগ
ইউরোপীয় নেতারা ভ্যান্সের বক্তব্যের প্রতি তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমাইয়ার বলেছেন, “নতুন আমেরিকান প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের থেকে অনেকটাই ভিন্ন, যা সহযোগিতা ও আস্থার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা রাখে না।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইনও ভ্যান্সের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি সময়ের মধ্যে আছি, যখন আমাদের সম্মিলিতভাবে রাশিয়াকে জবাবদিহি করতে হবে।”
ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ও শান্তি প্রক্রিয়া
মিউনিখ সম্মেলনে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এবং শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র আলোচনা হয়। ইউরোপীয় মিত্রদের আশ্বস্ত করে ভ্যান্স বলেন, “রাশিয়া যদি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে, তবে দেশটি আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক পদক্ষেপের সম্মুখীন হবে।”
এদিকে, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বেয়ারবক বলেন, “যে কোনো শান্তি আলোচনা যদি ইউক্রেন ও ইউরোপীয়দের অংশগ্রহণ ছাড়া হয়, তা নিরাপত্তা প্রদান করতে পারবে না।”
Leave a Reply