ডেঙ্গু মশা নিধনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ

ডেঙ্গু মশা নিধনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ

ডেঙ্গু মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সকল সাধারণ জনগণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বক্তারা।
তারা অভিযোগ করে বলেন, দেশের অভিজাত্য এলাকাতেই শুধু নিয়মিত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনের স্প্রে করা হলেও অনুন্নত এলাকা এবং নানান বস্তিতে কোন প্রকার স্প্রে করা হয় না। করা হলেও সেটা দেখা যায় হঠাৎ হঠাৎ। এমনকি অনুরোধ করলেও কোন ফল পাওয়া যায় না।
গতকাল রোববার ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও প্রতিরোধে করনীয় বিষয়ে গণসচেতনতামূলক আলোচনা ও গোলটেবিল বৈঠকে এ অভিযোগ করেন।


ডেঙ্গুর প্রকোপ থেেক বাঁচার জন্য ও প্রতিরোধ গড়ার লক্ষ্যে কি কি করনীয়, সে বষিয়ে আলোকপাত করার জন্য বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) উদ্যোগে রাজধানীর প্রসেক্লাব এলাকার সরিডাপ অডটিরয়িামে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্টার অধ্যাপক ডা. মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার।
বিপিএমসিএ’র সভাপতি এম এ মুবিন খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী।


প্রধান অতিথি ড. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গু জ্বর একটি মশা-বাহিত ভাইরাল সংক্রমণ। বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে এটি একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ। এই রোগটি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হালকা ফ্লু থেকে গুরুতর এবং সম্ভাব্য মারাত্মক অবস্থা পর্যন্ত নানারকম উপসর্গ উপস্থাপন করে। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, জয়েন্ট এবং পেশীতে ব্যথা, ফুসকুড়ি এবং হালকা রক্তপাত। গুরুতর ক্ষেত্রে, ডেঙ্গু থেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে অগ্রসর হতে পারে, উভয়ই সময়মত চিকিৎসকের হস্তক্ষেপ ছাড়া জীবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি হতে পারে।
মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী জানান, ডেঙ্গু জ্বরের নির্ণয় সাধারণত রোগীর ক্লিনিকাল লক্ষণ এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকা অঞ্চলে এক্সপোজারের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে করা হয়। পাশাপাশি রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি সনাক্তকরণের মতো ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলিও রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।


তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ গুরুতর আকার ধারণ করেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুসারে, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গুর কারণে ৪৬৫ জন মারা গেছে এবং বছরের শুরু থেকে ৯০,৭৯৮ টি ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে।
এর প্রতিকার হিসেবে তিনি মশার সংখ্যা কমানোসহ মশার সংস্পর্শ হ্রাস করাকে জোরারোপ করেন। এজন্য তিনি প্রজনন স্থান নির্মূল, মশা নিরোধক এবং জাল ব্যবহারসহ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন জানান, নিয়মিতভাবে জলের পাত্রগুলি খালি করা এবং পরিষ্কার করে সঠিক বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতি ব্যবহার করা এবং সঠিক নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি প্রায় ৫০% কমে যায়।
এর সঙ্গে পোকামাকড় নিরোধক মশারি ব্যবহার করা বিশেষ করে শিশুদের মশারির নিচে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।


বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতাই একমাত্র সামাধান বলে অভিহিত করেন। এর জন্য ব্যাপক প্রচারণা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাগিদ দেন।
বিপিএমসিএ’র সভাপতি এম এ মুবিন খান জানান, জনসচেতনতা নিশ্চিত করতে সংগঠনটি এ সপ্তাহব্যাপী একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সচেতনতামূলক সেমিনার, আলোচনা সভা ও লিফলেট বিতরণ, গনসংযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প এবং স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন বাজার এলাকাতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা।
তিনি জানান, এ কার্যক্রমটি সরকারের পাশাপাশি বছরব্যাপী পালন করার পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.