অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের একটি জটিল পরিস্থিতি ও উত্তেজনার মধ্যে দল-মতনির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি পতিত আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্রদের বাদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন পর্বের এ বৈঠকগুলো জাতীয় ঐক্যের পথে গুরুত্বপূর্ণ এবং সফল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে মত ও পথের ভিন্নতা থাকলেও দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ।
একজন হিন্দুধর্মীয় নেতার গ্রেপ্তার এবং এর পর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগ ও আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস ধারাবাহিকভাবে রাজনীতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করেন, যাতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, হিন্দু সম্প্রদায়কে ঘিরে তৈরি হওয়া এই অস্থিরতার পেছনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার ভূমিকা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষও এর সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার এ সংলাপের মাধ্যমে দুটি প্রধান বার্তা দিয়েছে। প্রথমত, দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে সরকার আপসহীন। দ্বিতীয়ত, ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব পক্ষ এখনো ঐক্যবদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলো এই ঐক্য বজায় রেখে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় স্বৈরাচারমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগোতে চায়।
এ পরিস্থিতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার, তাঁর জামিন আবেদন নাকচ, আইনজীবী হত্যাকাণ্ড, ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা এবং জাতীয় পতাকার অবমাননা—এসব ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এমনকি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানও পরিস্থিতিকে জটিলতর করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপগুলো দেশের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
Leave a Reply