গত ১৫ বছরে সংঘটিত বিভিন্ন গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করেছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।
শনিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেওয়া কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গুমের ঘটনার সঙ্গে একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। কমিশন একই সঙ্গে গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ এবং র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুম-সংক্রান্ত ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, এবং পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুমের ঘটনায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ১,৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগী ফিরে এসেছেন, তবে ২৭ শতাংশ (প্রায় ২০৪ জন) এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গুমের সঙ্গে জড়িতরা ঘটনাগুলো এমনভাবে ঘটিয়েছেন, যাতে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন বাহিনী এসব ঘটনায় নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা বিনিময় করেছে এবং আলামত ধ্বংস করেছে।
কমিশনের সদস্যরা অধ্যাপক ইউনূসকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য গোপন বন্দিশালা “আয়নাঘর” পরিদর্শনের অনুরোধ জানান। এতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হতে পারে বলে তাঁরা মনে করেন।
কমিশন তিন মাস পর মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আরও এক বছর সময় লাগবে।
কমিশন প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তলব এবং জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না করতে, অভিযুক্তদের সম্পূর্ণ তালিকা এখনই প্রকাশ করা হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন “মায়ের ডাক”-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম দ্রুত বিচার এবং তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
Leave a Reply